তনময় চক্রবর্তী, ২৬আগস্ট, শিলিগুড়ি: করোনা ও বৃষ্টির কারণে প্রতিমার বরাত নেই,আর সেই কারনেই মাথায় হাত মৃৎশিল্পেদের।হাতে গোনা আর ১৫ দিন, এর পরেই গণেশ পুজো আর তার কিছু দিন পরই বিশ্বকর্মাপূজো। বিশ্বকর্মা পূজার শেষ হওয়ার পরেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা।
দুই বছর আগেও এই সময় মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। কিন্তু গত বছরের মতো এই বছরও করোনা ও বৃষ্টির কারণে মৃৎশিল্পীদের জীবন জাপন নানান সমস্যায় জর্জরিত।গত বছর শারোদৎসব সহ অন্যান্য পুজোগুলিতে সেভাবে কোনো চমকই ছিল না। মৃৎশিল্পীদেরও সেই কারনে সমস্যা পোহাতে হয়েছে। এবারও পরিস্থিতি একই রকম। করোনার কারণে অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছে গোটা দেশ, সমস্যাতে বাংলাও, পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টি সমস্যা আরো বাড়িয়েছে মৃৎশিল্পদের।
প্রত্যেক বছর এই সময় প্রতিমা গড়তে ব্যস্ত থাকত পাল পাড়া ও কুমার টুলির মৃৎ শিল্পীরা। কিন্তু এই বছর এখনও পর্যন্ত দুর্গাপ্রতিমার বরাত তো দুর, বিশ্বকর্মা ও গনেশের প্রতিমারও বায়না সেভাবে হয়নি। শিলিগুড়ি ও মাটিগাড়ার মৃৎশিল্পীরা পার্শ্ববর্তী পাহাড়ী এলাকার জন্যও প্রতিমা তৈরি করেন। পাহাড়ী এলাকার জন্য মূলত ছোট আকৃতির প্রতিমা তৈরি করা হয়।
করোনার জন্য পাহাড় থেকেও সেভাবে মানুষ না আসার কারনে এই ধরনের প্রতিমার বিক্রি নিয়েও আশঙ্কার মেঘ জমেছে মৃৎশিল্প দের মধ্যে।শিলিগুড়ি শহর সহ মাটিগাড়া এলাকাতেও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মৃৎশিল্পীদের কারখানা। অধিকাংশ কারখানাই অস্থায়ী।
ক্লাব বা কোন জমি ভাড়া নিয়ে মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা তৈরি করেন। কেবল মাত্র শহরের কুমোরটুলিতে স্থায়ী কারখানা রয়েছে মৃৎশিল্পীদের। মৃৎশিল্পী দের প্রতিমা গড়ার কারখানাগুলি সাধারণত বাঁশের চাটাই দিয়েই ঘেরা। উপরে ত্রিপল টাঙানো থাকে।
এই সমস্ত মৃৎ শিল্পীদের কারখানাগুলোতে দুই বছর আগেও অনেক কর্মচারী কাজ করতেন। বর্তমানে করোণার জন্য খুব কমসংখ্যক কর্মচারী দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। তার উপর বায়না নেই। গতবছর করোনার জেরে পুজোর উজ্জলতা অনেকটা কম ছিল।
করোনার কারণে পুজোর সংখ্যাও কমে গিয়েছিল। পুজো হয়েছিল ছোট বাজেটের। মৃৎশিল্পীদের মাথায় পড়েছিলো হাত। অনেক মৃৎশিল্পীদের তৈরি প্রতিমা বিক্রিও হয়নি। এবারও তেমন আশঙ্কাই করছেন মৃৎশিল্পীরা। শিলিগুড়ির মৃৎশিল্পী অনন্ত পাল বলেন গত 18 বছর ধরে মাটির তৈরি প্রতিমা বানিয়ে আসছেন। গত বছরের মতো এই বছরও তাঁরা আশঙ্কা নিয়েই প্রতিমা তৈরি করছেন।
সামনেই গণেশ পুজো ও বিশ্বকর্মা পুজো। বৃষ্টি ও করোনার জন্য তাদের প্রতিমার বায়নাও হচ্ছে না। যাও বা বরাত পেয়েছেন বৃষ্টির জন্য প্রতিমা শুকাতেও পারছেন না। বৃষ্টির কারণে হিটার দিয়ে প্রতিমা শুকোতে হচ্ছে। তাতে প্রচুর খরচও হচ্ছে।
মৃৎশিল্পীরা বললেন প্রত্যেক বছর গণেশ পুজোর অনেক আগে থেকেই গণেশ প্রতিমার পাশাপাশি বিশ্বকর্মা ও দুর্গা প্রতিমার বায়না চলে আসত। কিন্তু গত বছরের মতো এই বছরও সেভাবে গণেশ, বিশ্বকর্মা ও দুর্গার বায়না আসেনি। প্রত্যেক বছর শিলিগুড়ির এক এক জন মৃত শিল্পী 200 থেকে 300টি প্রতিমা তৈরি করতেন।
সেখানে গতবছর 50 থেকে 100 টা প্রতিমা তৈরি করেন তারা। তাও আবার বেশকিছু প্রতিমা বিক্রি করতে পারেন নি। করোনার কারণে বড় প্রতিমার সেভাবে আর চাহিদা নেই। কারন গোটা দেশের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকটেও বাংলা।
সেই কারণে ছোট প্রতিমাই তৈরি করা হচ্ছে। প্রত্যেক বছর এই সময়ে বিশ্বকর্মা প্রতিমা রং করা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু বরাত না আসাতে প্রতিমা বানাতেও সাহস পাচ্ছেন না মৃৎশিল্পীরা। তবে পেটের ভাত জোগাড় করতে প্রত্যেকেই কিছু কিছু করে প্রতিমা বানাচ্ছেন।
মৃৎশিল্পীদের আশা অন্ততপক্ষে বানানো প্রতিমাগুলো বিক্রি হয়ে যাক । অপর দিকে প্রবল বৃষ্টি শিল্পীদের সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে।এই বৃষ্টি হওয়ার কারণে অনেক কারখানায় জল ঢুকে পড়ায় প্রতিমার মাটি ভিজে যাচ্ছে, আর তা শুকোতে বেশি সময় লাগছে। সব মিলিয়ে নানান চিন্তার মধ্যে রয়েছেন মৃৎশিল্পীরা।