শিলিগুড়ি,১২মে,সুস্মিতা সাহা বিশ্বাস:রাজ্যে বেলাগাম করণা সংক্রমণ। দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে স্বজনহারাদের কান্না। বিগত ৭ দিনে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বাংলায়।মারন করোনা সংক্রমনের ভয়াবহতা যে কোথায় পৌঁছেছে স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই তা স্পষ্ট।
মঙ্গলবার রাতে স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে 24 ঘন্টায় বাংলায় মৃতের সংখ্যা ১৩২। অন্যদিকে 24 ঘন্টায় করনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজারের গণ্ডি পেরিয়েছে। রাজ্যে 24 ঘন্টায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ১৩৬। স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে গত কয়েক দিনে দৈনিক মৃত্যু এবং সংক্রমণের নিরিখে শীর্ষস্থানে রয়েছে উত্তর 24 পরগনা এবং কলকাতা।
বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপেই বেসামাল দেশ তথা রাজ্য।তার ওপর আবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগস্টেই আসতে চলেছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। গবেষকরা বলছেন করোনার নতুন স্ট্রেন আরো বেশি সংক্রমক। এই ভয়াবহ দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচতে চাইছে বাংলাবাসী। অপরদিকে রাজ্যের এই ভয়াবহ করোণা পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার।
বিগত 24 ঘন্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ১৩৬ জন। করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৩২ জনের। বিগত 7 দিনে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাটা কিছুতেই একশোর নিচে নামছে না। যাতে রীতিমতো কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে স্বাস্থ্য দপ্তরের। করোনার প্রথম ঢেউ থেকে এখনো পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লক্ষ ৫২ হাজার ১৮৫ জন। বিভিন্ন হাসপাতাল নার্সিং হোম থেকে বিগত 24 ঘন্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৮হাজার ৯৯৪। করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি অব্যাহত করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনাও। উত্তর 24 পরগনা এবং কলকাতায় বিগত 24 ঘন্টায় মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে ৩৯ এবং ৩৭।
উত্তরবঙ্গের মধ্যে আক্রান্ত এবং মৃতের তালিকায় প্রথমের দিকে রয়েছে দার্জিলিং,জলপাইগুড়ি, মালদা ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। জলপাইগুড়ি জেলায় গত 24 ঘন্টায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮৮জন। জলপাইগুড়ি জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের।দার্জিলিং জেলায় গত 24 ঘন্টায় করণা আক্রান্তের সংখ্যা ৭১৫। দার্জিলিং জেলায় গত 24 ঘন্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। আলিপুরদুয়ার জেলায় গত 24 ঘন্টায় করণা আক্রান্ত হয়েছেন ১৯১ জন। কোচবিহার জেলায় আক্রান্ত ২৬৭ জন। কালিংপং জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬৯জন। কালিংপং জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।উত্তর দিনাজপুর জেলায় করোনায় আক্রান্ত ২০৫ জন। উত্তরদিনাজপুর জেলাতেও মৃত্যু হয়েছে ১জনের।দক্ষিণ দিনাজপুরে আক্রান্ত হয়েছেন ২০৪জন। মালদায় আক্রান্ত ২৮৯ জন।
সবমিলিয়ে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যাটা দিন দিন বেড়েই চলেছে দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলায় জেলায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে নবান্নের নির্দেশ অনুযায়ী লাগু হয়েছে আংশিক লকডাউন। তবে দিন প্রতিদিন পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ায় পুনরায় রাজ্যে ফুল লকডাউন করার দাবি তুলছেন পশ্চিমবঙ্গবাসী। কারণ বাঁচতে চাইছে বাংলা। আর করোনার এই চেইন ব্রেক করতে ফুল লকডাউনই যে একমাত্র অস্ত্র সেটাও ধীরে ধীরে বুঝতে পারছেন আমজনতা। পাশাপাশি কেন্দ্র এবং সুপ্রিম কোর্ট ও পরিস্থিতি সামাল দিতে ফুল লকডাউনকেই একমাত্র অস্ত্রই হিসেবে মনে করছেন।
আর সেই কারনেই বাংলাবাসি চাইছে কড়া সিদ্ধান্ত নিক রাজ্য সরকার। অপরদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ফুল লকডাউন করে দরিদ্র মানুষদের অসুবিধার মুখে ফেলে দিতে চাইছেন না, তাই নবান্নের নির্দেশমতো রাজ্যে চলছে আংশিক লকডাউন। পাশাপাশি মহামারী থেকে বাঁচতে রাজ্যবাসীকে মাস্ক পরা এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার অনুরোধও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ।
তবে প্রতিদিনের এই শতাধিক মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার। তাই এখন এইটাই দেখার অবশেষে কি অন্যান্য রাজ্যের মতই ফুল লকডাউনের পথেই হাটতে বাধ্য হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার।