শিলিগুড়ি,১৩মে, সুস্মিতা সাহা বিশ্বাস: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিধ্বস্ত ভারত। করোনা আক্রান্তের, সংখ্যার ক্ষেত্রে ভারতের স্থান বিশ্বে এখন দ্বিতীয়। আমেরিকার পরেই ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অপরদিকে মৃত্যুর নিরিখে ভারত এখন তৃতীয়।বর্তমান পরিসংখ্যান বলছে দেশের দৈনিক প্রায় ৪ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে করোনা।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কার্যত বিধ্বস্ত দেশের পাশাপাশি গোটা রাজ্য। প্রতিদিনই রাজ্যে বাড়ছে করণা আক্রান্তের সংখ্যা। অব্যাহত মৃত্যু মিছিল।বর্তমানে উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে করোনার নতুন স্ট্রেন। যা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ও রাজ্যে রেকর্ড মৃত্যু হয়েছে।চারিদিকে শোনা যাচ্ছে স্বজনহারাদের বুক ফাটা কান্না। বিগত ৭ দিনে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বাংলায়। বুধবার রাতের স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে ২৪ ঘন্টায় বাংলায় মৃতের সংখ্যা ১৩৫। অন্যদিকে ২৪ ঘন্টায় করনায় আক্রান্তের সংখ্যা কুড়ি হাজারের গণ্ডি পেরিয়েছে। রাজ্যে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ৩৭৭। স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে গত কয়েক দিনে দৈনিক মৃত্যু এবং সংক্রমণের নিরিখে শীর্ষস্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা এবং কলকাতা।
বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপেই বেসামাল দেশ তথা রাজ্য। গবেষকরা বলছেন করোনার নতুন স্ট্রেন আরো বেশি সংক্রমক। এই মহামারীর হাত থেকে বাঁচতে চাইছে সকলে। অপরদিকে রাজ্যের এই ভয়াবহ করোণা পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার। বিগত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৩৭৭ জন। করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৩৫ জনের। বিগত ৭ দিনে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাটা কিছুতেই একশোর নিচে নামছে না। যাতে রীতিমতো কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে স্বাস্থ্য দপ্তরের। করোনার প্রথম ঢেউ থেকে এখনো পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লক্ষ ৭৪ হাজার ৪৯৪ জন। বিভিন্ন হাসপাতাল নার্সিং হোম থেকে বিগত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৯ হাজার ২৩১। করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি অব্যাহত করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনাও।
উত্তর ২৪পরগনা এবং কলকাতায় বিগত ২৪ ঘন্টায় মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে ২৭ এবং ৪৪। উত্তরবঙ্গের মধ্যে আক্রান্ত এবং মৃতের তালিকায় প্রথমের দিকে রয়েছে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, মালদা ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। জলপাইগুড়ি জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮১ জন। জলপাইগুড়ি জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের।দার্জিলিং জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় করণা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪৫। দার্জিলিং জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। আলিপুরদুয়ার জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় করণা আক্রান্ত হয়েছেন ১২৫ জন। কোচবিহার জেলায় আক্রান্ত ১৭৪ জন। কালিংপং জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ জন। উত্তর দিনাজপুর জেলায় করোনায় আক্রান্ত ১৮৯ জন। উত্তরদিনাজপুর জেলাতেও মৃত্যু হয়েছে ১জনের।দক্ষিণ দিনাজপুরে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৪ জন।দক্ষিণ দিনাজপুরে মৃত্যু হয়েছে ৩জনের। মালদায় আক্রান্ত ২৭৪ জন।
সবমিলিয়ে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যাটা প্রতিদিনই বেড়েই চলেছে দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলায় জেলায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে নবান্নের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্যে চলছে আংশিক লকডাউন। তবুও যেনো রোখা যাচ্ছে না আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে প্রাণে বাঁচতে পুনরায় রাজ্যে ফুল লকডাউন করার দাবি তুলছেন অনেকেই। আর করোনার এই চেইন ব্রেক করতে ফুল লকডাউনই যে একমাত্র অস্ত্র বলেই মনে করছে কেন্দ্র এবং সুপ্রিম কোর্ট ।
- অপরদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ফুল লকডাউন করে দরিদ্র মানুষদের অসুবিধার মুখে ফেলে দিতে চাইছেন না, তাই রাজ্যে করা হয়েছে আংশিক লকডাউন।মহামারী থেকে বাঁচতে রাজ্যবাসীকে মাস্ক পরা এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । পাশাপাশি বলা হচ্ছে মহামারী রোগ থেকে বাঁচতে চাই ভ্যাকসিনই একমাত্র পথ। আপনাদের কাছে অনুরোধ এই মহামারী থেকে বাঁচতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বেরোবেন না। সবসময় মাক্স ব্যবহার করুন, স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন এবং শারীরিক দূরত্ব মেনে চলুন। আর অবশ্যই টিকা নিতে ভুলবেন না।