শিলিগুড়ি,২৬মে, ফ্ল্যাশ মিডিয়া নিউজ ডেস্ক: রাস্তায় ছুটছে গাড়ি। চালকের আসনে বসে রয়েছেন এক বাবা। আর তাঁর পাশের আসনে রাখা পিপিই কিট ও প্লাস্টিকে মোড়া দেহ।আর ঐ দেহ বাঁধা সিট বেল্ট দিয়ে। করোনায় মৃত নিজের মেয়ের দেহ নিয়ে ঠিক এভাবেই শ্মশানে পৌঁছলেন বাবা। ছোট্ট ঐ মেয়েটি যখন বেঁচে ছিল তখনও গাড়ীর আসনে বসলে বাবা বলতো সিট বেল্টটা পড়ে নে। চোখে জল আনা এই ছবিই এখন নেটদুনিয়ায় ভাইরাল।দিনকয়েক ধরে শরীর ভাল যাচ্ছিল না রাজস্থানের বাসিন্দা সীমার।
করোনা শরীরে বাসা বেঁধেছে বলেই আশঙ্কা করেছিল পরিবারের লোকজন। অবশেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তাতেই জানা যায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ওই তরুণী। গত ২৪ এপ্রিল কোটার এক হাসপাতালে ভরতি করা হয় তাঁকে। তবে শেষরক্ষা হয় নি। রবিবার হাসপাতালেই মৃত্যু হয় ঐ তরুণীর। তাঁর বাবা স্থির করেন ঝালাওয়ারের শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে মেয়েকে শেষকৃত্যের জন্য। শ্মশানের দূরত্ব বাড়ি থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। ওই রাস্তা নিয়ে যেতে অ্যাম্বুল্যান্স বা শববাহী গাড়ি ছাড়া কোনও গতিই নেই।
কিন্তু বাধ সাধলেন খোদ অ্যাম্বুল্যান্স চালক। তরুণীর বাবার অভিযোগ, ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা যেতে ৩৫ হাজার টাকা দাবি করেন অ্যাম্বুল্যান্স চালক। কিন্তু ওই পরিমাণ অর্থ দেওয়ার সামর্থ্য মধ্যবিত্ত পরিবারের ওই তরুণীর বাবার নেই।কিন্তু মেয়ের সৎকার হবে না, তা তো হতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে নিজেই গাড়ির চালকের আসনে বসেন। পাশের আসনে প্লাস্টিকে মোড়া তাঁর মেয়ের দেহ সিটবেল্ট দিয়ে আটকে নেন। আর সেভাবেই গাড়ি চালিয়ে এগোতে থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত শ্মশানেও পৌঁছন। নিজের মেয়েকে শেষযাত্রায় এভাবে বাবার শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার ছবি ভাইরাল হতে বিশেষ সময় লাগেনি নেটিজেনদের কাছে। যে দেখেছেন সেই অবাক হয়ে গিয়েছেন।
নিদারুণ দুঃখের এই ঘটনা মন খারাপ করে দিয়েছে সকলের। একজন বাবা কতটা অসহায় হলে এই কাজ করতে পারে, এই ঘটনা নজর এড়ায়নি প্রশাসনেরও। এই ছবি প্রকাশ্যে আসার পর শুরু হয়েছে তদন্ত। অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া নির্ধারণের পরেও কেন এমন কাণ্ড ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর তাই তো হয়। কোন একটা ঘটনার পর তদন্ত হওয়াটা স্বাভাবিক। আর প্রশাসনের কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ফুটফুটে ওই মেয়েটিকে বেঁচে থাকা কালে যে সিটে বসে সিট বেল্ট বেঁধে বাবার গাড়িতে করে ঘুড়ে বেড়াত, একবার ভাবুন তো, সেই মেয়েটির মৃত্যুর পর প্লাস্টিকে মোড়া দেহে সিটবেল্ট পড়াতে কতটা কষ্ট হয়েছিল বাবার।কবে পরিবর্তন হবে আমাদের মানসিকতার? কবে টাকার কাছে জিতে যাবে মানবিকতা?