শিলিগুড়ি,৬মে,প্রসেনজিৎ রাহা: এখন প্রতিদিন করোনায় মৃত্যুতে সেঞ্চুরি পার করছে বাংলা। প্রতিদিন এই চীনা ভাইরাস কেড়ে নিচ্ছে আমাদের প্রিয়জনকে। যা পরিস্থিতি চলছে তা দেখে মনে হচ্ছে এখনই নিস্তার নেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর হাত থেকে।এর ওপর আবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগস্টে আসতে চলেছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউতেই সর্বস্বান্ত দেশের পাশাপাশি বাংলা।
প্রতিদিন হাসপাতাল নার্সিং হোমে প্রিয়জন হারানো মানুষগুলোর কান্না, শ্মশানে সারিসারি দেহ সৎকারের দৃশ্য এখন পশ্চিমবঙ্গেরও নিত্যদিনের ছবি হয়ে গেছে। বাংলাবাসী চাইছে একটু বাঁচতে। আর কত?কত মানুষের প্রাণ কেড়ে নেবে করোনা? রাজ্যের এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন সরকার,
বাংলাবাসি কে করোনার হাত থেকে রক্ষা দিতে গত শুক্রবারই মিনি লকডাউন এর সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। জনসমাগম রুখতে এবং করোনার চেইন ব্রেক করতে অনির্দিষ্টকালের জন্য শপিং মল, বার, রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল,জিম,স্পা, সুইমিংপুল বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি, বাজার হাটখোলার ক্ষেত্রেও নানান রকম নির্দেশিকা জারি করেছে নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন না বৃহস্পতিবার থেকে অর্ধেক চলবে গণপরিবহন। রাজ্য বন্ধ করা হয়েছে লোকাল ট্রেন। সরকারি-বেসরকারি অফিসে কর্মীদের আসার ক্ষেত্রেও আনা হয়েছে নানান নিয়ম কানুন।
গোটা দেশের পাশাপাশি বাংলার পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক।গোটা দেশে ক্রমশ বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বিগত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৮১০২ জন। মৃত্যু হয়েছে ১০৩ জনের। প্রতিদিন পশ্চিমবঙ্গে এখন ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। মঙ্গলবার এর এবং গতকালের রেকর্ড মৃত্যু কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে স্বাস্থ্য দপ্তরের। করোনার প্রথম ঢেউ থেকে এখনো পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯ লক্ষ ৩৪ হাজার ৭৩৭ জন। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে, প্রথম ঢেউ থেকে বাংলায় করোনার কারণে এখনো পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১১৯৫০ জনের। করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি অব্যাহত করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনাও।
রোজই করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে বাংলার প্রতিটি জেলায়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা এবং কলকাতা। কলকাতায় বিগত ২৪ ঘন্টায় মৃতের সংখ্যা ২৫ ।উত্তর ২৪ পরগনা তে ২৭। আর উত্তরবঙ্গের মধ্যে আক্রান্ত এবং মৃতের তালিকায় প্রথমে রয়েছে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলা। তবে আক্রান্তে ও মৃত্যুতে পিছিয়ে নেই দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি শহরও।
দার্জিলিং জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। জলপাইগুড়ি জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৯৬ জন। জলপাইগুড়িতে ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। দার্জিলিং জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭৮ জন। দর্জিলিং জেলাতে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।আলিপুরদুয়ার জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯ জন। কোচবিহার জেলায় আক্রান্ত ১৮৫ জন। কালিংপং জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪ জন। উত্তর দিনাজপুর জেলায় করোণায় আক্রান্ত ৩৫১ জন। উত্তর দিনাজপুরের মৃত্যু হয়েছে ২ জনের।দক্ষিণ দিনাজপুরে আক্রান্ত হয়েছেন ২৫২ জন। মৃত ৩ জন। মালদায় আক্রান্ত ৫৪৪ জন। মালদা জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।
সবমিলিয়ে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের বঙ্গের জেলায় জেলায়। বর্তমান যা পরিস্থিতি
এই পরিস্থিতিতে পুনরায় রাজ্যে ফুল লকডাউন করার পথেই কি যেতে হবে রাজ্য সরকারকে? এই প্রশ্নই এখন উকিঝুকি মারছে সবার মনে। কারণ ইতিমধ্যেই প্রতিবেশী সিকিম এবং বিহার ফুল লকডাউনের পথেই হেটেছে। আর করোনার চেইন ব্রেক করতে ফুল লকডাউনই একমাত্র অস্ত্র বলেই মনে করছে কেন্দ্র এবং সুপ্রিম কোর্ট। আর সেই কারণেই আজ থেকে ফুল লকডাউন শুরু সিকিমে। প্রতিবেশী রাজ্য বিহারো ফুল লকডাউন এর পথে গেছে।
বাংলাবাসিও চাইছে কড়া সিদ্ধান্ত নিক রাজ্য সরকার। তবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ফুল লকডাউন করে দরিদ্র মানুষদের কে কষ্টের মুখে ফেলে দিতে চাইছেন না। তিনি সবাইকে মাস্ক ব্যবহার এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ করেছেন। পাশাপাশি মিনি লকডাউন করে চেষ্টা করেছেন বাংলা কে বাঁচানোর।