তনময় চক্রবর্তী, ৩০ আগস্ট, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ি কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম বর্তমানে ভগ্নদশায় পড়ে রয়েছে। 1981 সালে জ্যোতি বসু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন শিলিগুড়ির এই স্টেডিয়াম অর্থাৎ তিলক ময়দানের শুভ শিলন্যাশ হয় স্টেডিয়াম গড়ার লক্ষে। তিলক ময়দানের পরবর্তীকালে নামকরণ হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম।
এই কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের মাঠে এক সময় বড় বড় তারকা সেলিব্রিটি খেলোয়াড়রা খেলে গিয়েছেন। অনেক বড় বড় টুর্নামেন্ট খেলাও হতো এই মাঠে।মাঠে লাইট না থাকার কারণে রাতের বেলা খেলা আগে হতো না। সেই কারণে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে লাগানো হয় লাইট। গত দুই বছর আগেও স্টেডিয়ামের মাঠে ডার্বী ম্যাচ হয়েছিল। কিন্তু এখন কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের ভগ্নদশা হওয়ার কারণে এখন সব খেলাই প্রায় বন্ধ, তারওপর বিগত দুই বছর করোনার কারণে স্টেডিয়ামে প্রবেশ প্রায় সকল খেলোয়াড়দেরই বন্ধ।
আর সেই কারণেই কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে এই মাঠ। অতিসত্বর এই স্টেডিয়াম ঠিক না করলে কখন যে দুর্ঘটনা ঘটবে তা জানা নেই কারোরই। মাঠের গ্যালারির বসার জায়গা গুলো কিছু কিছু জায়গায় ভেঙ্গে গিয়েছে। বর্ষাকালে গ্যালারির বসার জায়গা গুলোতে জল জমে থাকার কারণে ও দেওয়াল চুয়ে চুয়ে জল পড়ার কারণে স্টেডিয়ামের অফিস থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুম গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
অনেক সময় ছাদ ফেটে সিমেন্টের প্লাস্টার ভেঙ্গে পড়েও যাচ্ছে।খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুম গুলো সুন্দর ভাবে বানানো হয়েছিল অনেক অর্থ খরচ করে। কিন্তু সংস্কারের অভাবে বর্ষাকালে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ড্রেসিং রুম গুলোর ছাদ দিয়ে জল পরার কারনে ঘরের ভেতরে জল জমা হয়ে যাচ্ছে। দেওয়াল চুয়ে জল পড়ার কারণে ড্রেসিংরুমের সিলিং গুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। স্টেডিয়ামের চারিপাশও বেহাল দশা হয়ে পড়ে রয়েছে।
কোথাও ভাঙ্গাচুরা অবস্থা আবার কোথাও ফাটল ধরেছে। এত বড় স্টেডিয়ামে পানীয় জলের সুব্যবস্থাও এখন ঠিকমতন নেই। জলের ট্যাংকির অবস্থাও শোচনীয়। জোরে হাওয়া বা ঝড় আসলে জলের ট্যাংকি পড়েও যেতে পারে।আর তার থেকে কোন বড়োসড়ো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মহাকুমা ক্রীড়া পরিষদের ক্রিকেট সভাপতি মনোজ বার্মা বলেন,স্টেডিয়ামের দায়িত্বে রয়েছে স্টেডিয়াম কমিটি, দার্জিলিংয়ের DM, ও শিলিগুড়ির SDO,সভাপতি ও সহ-সভাপতি ।
তারা বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে খুব কম সময় দিতে পারেন। তার দাবি গৌতম দেব শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশন এর চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। গৌতম দেব ক্রিয়া প্রেমী মানুষ ।স্টেডিয়াম কমিটির দায়িত্বে থাকলে স্টেডিয়ামের পরিকাঠামো সুন্দর হয়ে উঠবে বলে তিনি মনে করছেন। মনোজ ভার্মা আরো বলেন, স্টেডিয়ামে জলের লাইন থেকে সব পরিকাঠামোই খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে।
মাঠে কোন বড় খেলা হলে মানুষজন খেলা দেখতে এসে গ্যালারিতে ভিড় করলে ভেঙ্গে যেতে পারে স্টেডিয়াম।পশ্চিমবঙ্গে খেলার জগতে কলকাতার পরেই শিলিগুড়ি নাম উঠে আসে। শিলিগুড়ি শহর থেকে ক্রিকেটে রিচা,ঋদ্ধিমান, পিয়াংকা সহ ফুটবল টেবিল টেনিস এবং আরো বিভিন্ন খেলাধুলায় ছেলেমেয়েরা এগিয়ে রয়েছে।
সেই শিলিগুড়ি শহরের স্টেডিয়াম ভগ্নদশা হয়ে পড়ে রয়েছে তা ভাবতে অবাক লাগে। অপরদিকে মহাকুমা ক্রিয়া পরিষদের ফুটবল সচিব সৌরভ ভট্টাচার্য্য বলেন, দীর্ঘ ত্রিশ বছরের বেশি হয়ে গিয়েছে স্টেডিয়াম। পরিকাঠামো সযত্নে না রাখার কারণে ভগ্নদশা হয়ে পড়েছে। রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে DM ও SDOরা দায়িত্বে থাকেন।
তারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে সেভাবে স্টেডিয়ামের দিকে নজর দিতে পারেননা। রাজ্য সরকারের যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারা শিলিগুড়ি কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে দিকে নজর দিলে ভালো হয় বলেই দাবি করেছেন মহাকুমা ক্রিয়া পরিষদের ফুটবল সচিব সৌরভ ভট্টাচার্য্য। শিলিগুড়ি হল উত্তরবঙ্গের গর্ব। কবে রাজ্য সরকার এই স্টেডিয়ামের দিকে নজর দেয় এখন সেদিকেই তাকিয়ে উত্তরবঙ্গের ক্রীড়াপ্রেমীরা।