দেবাশিস দাস,১০আগস্ট,রায়গঞ্জ: প্রায় দুবছর ধরে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের করিডোরের এককোনে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক গৃহবধূ। পরিবারের কেউ যোগাযোগ না রাখায় বাড়িও ফিরতে পারছে না তারা। সবুজ শৈশব হারিয়ে পরম অযত্নে বড় হয়ে উঠছে এই দুই শিশু।
রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগী ও রোগীর আত্মীয় দের জন্য ব্যবহৃত করিডোরের এক কোনে আদুল গায়ে শুয়ে,বসে থাকে দুই শিশু। পাশে তাদের মা। আলুথালু বেশ, চোখ-মুখ ভাবলেশ হীন,কথাবার্তা অসংলগ্ন। হাসপাতাল চত্বরের দোকানদার বা আয়া মাসীদের বক্তব্য এই মহিলা মানসিক ভারসাম্যহীন। বছর দুয়েক ধরে এই করিডোরের ঘুপচিতেই দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বাস করেন এই মা।
শীত,গ্রীষ্ম, বর্ষায় ছোট্ট শরীরে কাঁপুনি ধরায়, ভিজে চুপসে যায় খোলা শরীর। কোভিড পরিস্থিতিতে তাদের মুখে মাস্ক নেই, স্যানিটাইজারের নামটাই হয়তো জানা নেই। এই অসহায় পরিস্থিতিতে না পাওয়া জীবনে বেড়ে উঠছে সবুজ শৈশব। হাসপাতালের চেনা পরিচিতদের সৌজন্যে দিনে ও রাতে কিছু খাবার জোটে এই যা। ঠিকমতো নিজের নাম না বলতে পারা দুই শিশুর মা বলেন,” বাড়ি কালিয়াগঞ্জে। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। বাড়ি থেকে কেউ খোঁজ নেয় না। তাই এখানে এসেছি। ঠিকমতো খাবার ও জোটে না।
এদিকে হাসপাতালের অস্থায়ী কর্মী সংগঠনের নেতা প্রশান্ত মল্লিক বলেন,” নিয়ম অনুযায়ী দুই শিশু ও তার মাকে হাসপাতালের অন্য কোথাও রাখা সম্ভব নয়। তবে এদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিশুদুটিকে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করবো। তবে এদের যাতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায় সেজন্য প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের আবেদন করছি।
অন্যদিকে হাসপাতালের এ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার অভীক মাইতি বলেন,” এক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তেমন কিছু করার নেই। তবে কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। অন্যথায় পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো। তবে কি কি করবে তা জানা নেই। এভাবেই কি কেটে যাবে ওদের কিশোর বেলা?
ফ্ল্যাশ মিডিয়া নিউজ এর তরফ থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, একটু দেখুন না, যদি এই মা ও দুই সন্তানের জন্য কিছু করা যায়। যদি ওদের কিশোরবেলা টা কে বাঁচানো যায়, যদি ওদের মুখে একটু দুবেলা খাবার তুলে দেওয়া যায়, দেখুন না যদি ওদেরকে একটু শিক্ষার আলো দেওয়া যায়।